কলকাতা ভ্রমণ - (২৩-০৩-১৮ )
আমি আর তাসিন সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে পড়লাম । আগে থেকেই কথা ছিলো আমরা দুইজন সকালে উঠে কলকাতা দেখতে বের হবো আর ওরা দুইজন ঘুমাবে । সেই কথামতো আমরা উঠে বেড়িয়ে গেলাম পথে ।
নিউ মার্কেট থেকে মিউজিয়ামকে উদ্দেশ্য করে আমরা দুইজন রিক্সা নিলাম; ভাড়া ৪০ রুপী । ভাড়া আসলে এতো বেশিও না । সফট কর্নার থেকেই একটু বাড়িয়ে দেয়া আর কি । ওদের রিক্সাগুলো খুবই অমানবিক লেগেছে আমার কাছে । দুই চাকার রিক্সায় পেছনে দুইজন যাত্রী বসে আর সামনে চালক সেটা পায়ে হেঁটে টেনে নিয়ে যায় । ঠেলাগাড়ি টাইপ আর কি ।
যাহোক, গিয়ে শুনি মিউজিয়াম খুলবে সকার নয়টায় । কি আর করা যাবে । পায়ে হেঁটে উদ্দেশ্যহীনভাবে এগোতে শুরু করলাম । রাস্তায় দুইজনে কিছু মিষ্টিও খেয়ে নিলাম । এরপরে একটু সামনে গিয়েই দেখলাম পার্ক স্ট্রীট মেট্রো স্টেশন ।
মেট্রো স্টেশনগুলোতে ফটো তোলা নিষেধ । আমার হাতে ডিএসএলআর থাকায় একটু সমস্যা হয়েছিলো । যাহোক, সেখান থেকে ২০ টাকায় শোভাবাজারের দুইটি টিকিট কাটলাম দুইজনে । ট্রেনে উঠে সত্যি আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি । এতো সুন্দর ব্যবস্থা যা নিজে না দেখলেই নয় ।
কলকাতায় যারা বেড়াতে যাবেন, আমি তাদেরকে অবশ্যই একবার মেট্রোতে ওঠার সাজেশন দিতে চাই । তবে মাথায় রাখবেন এখানে কিন্তু ফটো তোলার ব্যাপারে বেশ রেস্ট্রিকশন আছে । হয়তো ট্রেনের ভেতরেও তোলা উচিত না , তবুও আমি তুলেছি ।
ঠাকুরবাড়ির গেট
যাহোক, শোভাবাজার নেমে রওনা দিলাম জোড়াসাঁকো রবীন্দ্রনাথের বাড়ির অভিমুখে । ঢুকলামও জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির গেট দিয়ে ।
মার্বেল প্যালেস
মার্বেল প্যালেস-
কিন্তু কিছুদূর গিয়েই লোকজনকে কিভাবে কি জিজ্ঞেস করেছিলাম এখন মনে পড়ছে না । কিন্তু লোকজন সেই একই এলাকায় অবস্থিত মার্বেল প্যালেস নামে খ্যাত রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক বাহাদুরের বাড়ি দেখিয়ে দিয়েছিলো । আমরাও কিছু না বুঝে ঢুকে গিয়েছিলাম ভেতরে ।
সেখানে গিয়ে বুঝতে পারলাম আমরা ভুল জায়গায় চলে এসেছি । কিন্তু কি আর করার-এসেই যখন গিয়েছি, যা আছে তাই দেখি । এরপর ভেতরে গিয়ে যা দেখলাম তাতে পুরো অবাক হয়ে গিয়েছি । অসাধরণ সব সংগ্রহ ছিলো সেই মার্বেল প্যালেস মিউজিয়ামের ভেতরে । ভবনটির ভিতরে রয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য। বিশেষ করে গ্রীক ও রোমান পুরাণের দেবদেবী জিউস,মিনার্ভা,মার্কারি, এ্যাপোলো,হেরা, ভেনাস,কিউপিড যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে শ্বেত পাথরের দেহে । ভাস্কর্য ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য পেইন্টিং বা চিত্রকর্ম।
মার্বেল প্যালেস
পুরো মিউজিয়াম ঘুরে আমি একেবারে তব্দা খেয়ে গিয়েছি। OMG ! মনে হচ্ছিলো আমি পুরো ন্যুডের রাজ্য থেকে বের হলাম। বেশিরভাগ স্কেচ আর স্কালপচার ই ন্যুড। আর এসব শিল্পকর্মগুলো এতোটাই দৃষ্টিনন্দন এবং চিত্তাকর্ষক যে যেকোন পুরুষ মানুষকে নতুন করে তার পুরুষত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট । সেখানে ফটো তোলা একেবারেই নিষিদ্ধ । তবুও লুকিয়ে কয়েকটা তুলেছি যার সবকয়টা প্রকাশ করতে পারছি না । প্রসঙ্গত, মার্বেল প্যালেসে প্রবেশের জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগে । কারো কাছে সেই অনুমতিপত্র না থাকলে ওখানকার গার্ডদের কিছু টাকা দিলেই ভেতরে যেতে দেয় । আমরা দুইজন মিলে মোট ৩০ টাকা দিয়েছিলাম । যদিও ওরা অনেক বেশি আশা করেছিলো ।
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে
রবীন্দ্র মিউজিয়াম
কলেজ স্ট্রীট হয়ে হাওড়া গমন -
এই সেই নোবেলজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি । কিন্তু এখানে প্রবেশ করেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দমে যেতে হলো । হাতে সময় খুবই কম । সুতরাং দ্রুত সেখানে থেকে সেইম রুটে মেট্রো ধরে আমাদের টটি রোডের হোটেলে ফিরে এলাম । হোটেলে ফিরে দেখি দুপুর ১১.৪৫ বাজে । সুফল আর নিলয় দেখি আমাদের বিলম্বের জন্য রেগে ফুলে আছে । অলরেডি হোটেলের লোক কয়েকবার ওয়ার্নিং দিয়ে গেছে নাকি । আমরা ১৫ মিনিটের ভেতরেই রেডি হয়ে ব্যাগ&ব্যাগেজ সহ হোটেল থেকে বেড়িয়ে পড়লাম কলকাতার পথে ।
এই সেই নোবেলজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি । কিন্তু এখানে প্রবেশ করেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দমে যেতে হলো । হাতে সময় খুবই কম । সুতরাং দ্রুত সেখানে থেকে সেইম রুটে মেট্রো ধরে আমাদের টটি রোডের হোটেলে ফিরে এলাম । হোটেলে ফিরে দেখি দুপুর ১১.৪৫ বাজে । সুফল আর নিলয় দেখি আমাদের বিলম্বের জন্য রেগে ফুলে আছে । অলরেডি হোটেলের লোক কয়েকবার ওয়ার্নিং দিয়ে গেছে নাকি । আমরা ১৫ মিনিটের ভেতরেই রেডি হয়ে ব্যাগ&ব্যাগেজ সহ হোটেল থেকে বেড়িয়ে পড়লাম কলকাতার পথে ।
শুরুতেই নিউ মার্কেটের সেই একই হোটেলে গিয়ে আমরা দুপুরের খাবার পর্ব সমাপন করলাম । এরপর সেখানে থেকে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম ধর্মতলা মোড়ে । সেখানে গিয়ে চারজনে জীবনের প্রথম ট্রামে চেপে বসলাম । এর আগে আমি কোনদিন ট্রাম দেখিনি, ট্রামের কোন স্ট্রাকচার আমার আন্দাজেও ছিলো না । শুধু কলকাতার লেখকদের বইতে অসংখ্যবার নামটা পড়েছি । এবার সেই আশাটা পূর্ণ হলো ।
এই সেই নোবেলজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি । কিন্তু এখানে প্রবেশ করেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দমে যেতে হলো । হাতে সময় খুবই কম । সুতরাং দ্রুত সেখানে থেকে সেইম রুটে মেট্রো ধরে আমাদের টটি রোডের হোটেলে ফিরে এলাম । হোটেলে ফিরে দেখি দুপুর ১১.৪৫ বাজে । সুফল আর নিলয় দেখি আমাদের বিলম্বের জন্য রেগে ফুলে আছে । অলরেডি হোটেলের লোক কয়েকবার ওয়ার্নিং দিয়ে গেছে নাকি । আমরা ১৫ মিনিটের ভেতরেই রেডি হয়ে ব্যাগ&ব্যাগেজ সহ হোটেল থেকে বেড়িয়ে পড়লাম কলকাতার পথে ।
শুরুতেই নিউ মার্কেটের সেই একই হোটেলে গিয়ে আমরা দুপুরের খাবার পর্ব সমাপন করলাম । এরপর সেখানে থেকে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম ধর্মতলা মোড়ে । সেখানে গিয়ে চারজনে জীবনের প্রথম ট্রামে চেপে বসলাম । এর আগে আমি কোনদিন ট্রাম দেখিনি, ট্রামের কোন স্ট্রাকচার আমার আন্দাজেও ছিলো না । শুধু কলকাতার লেখকদের বইতে অসংখ্যবার নামটা পড়েছি । এবার সেই আশাটা পূর্ণ হলো ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রেসিডেন্সি কলেজ
সেখানেই রয়েছে সেই বিখ্যাত মান্নাদের কফি হাউজ । “কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই” ওখানে গিয়েই গানটা মনের পাতায় গুনগুন করছিলো । কফি হাউজে গিয়ে চারজনে কফি আর ন্যুডলস খেলাম । ভাবা যায় আজকে এমন এক কফি হাউজে এসেছি যেখানে একটা সময়ে মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ বসু, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিৎ রায়, সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, বাঙালি অভিনেতা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো কত বিখ্যাত ব্যক্তিরা আড্ডা দিয়েছেন এই কফি হাউজে! ঠিক তাদের রেখে যাওয়া স্থানটিতে আমরা বসে কফি খাচ্ছি ভাবতেই কেমন আলাদা একটা শিহরণ অনুভব করছিলাম।
অ্যালবার্ট হল ছিল এর পূর্বনাম। ১৮৭৮ সালের এপ্রিলে তৎকালীন ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়ার স্বামী অ্যালবার্টের নামকরণে এটির নাম করণ করা হয়। এরপর কেটে গেছে প্রায় ১৪০ বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সাথে যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাসের খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটা সম্পর্ক আছে তেমনি উপমহাদেশে বৃটিশবিরোধী নানা আন্দোলন-সংগ্রামের অনেক ইতিহাসে জড়িয়ে আছে এই কফি হাউজটির সাথে।
সেখানে বসেই খবর পেলাম আমাদের কালকা মেইল তিন ঘণ্টা লেট । মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো শুনে । কি আর করা যাবে । এদিকে বিকেলও হয়ে গেছে । ওখান থেকে বাসে চেপে সোজা হাওড়া রেলওয়ে স্টেশনে চলে গেলাম ।
রাতের হাওড়া ব্রীজ
পশ্চিমবঙ্গের হুগলি নদীর উপর অবস্থিত কলকাতা এবং হাওড়া শহরের মাঝে সংযোগকারী বড় খিলানযুক্ত একটি ঝুলন্ত সেতু হলো হাওড়া ব্রিজ। এটার বর্তমান নাম রবীন্দ্র সেতু। দৈর্ঘ্য ৭৫০ মিটার। এর উপর দিয়ে দৈনিক প্রায় আশি হাজার যানবাহন এবং প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করে। হাওড়া ব্রিজ এই জাতীয় সেতু হিসেবে পৃথিবীতে ষষ্ঠ বৃহত্তম এবং ভারতবর্ষে বৃটিশদের রেখে যাওয়া একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
যাহোক, হাতে সময় আছে দেখে চারজনে কিছু সময় নৌভ্রমণ করলাম হুগলি নদীতে । নদীর ঠাণ্ডা বাতাসে বেশ ভালো লাগলো । এরপর নৌভ্রমণ শেষে ফিরে এসে অনেক্ষণ বসে ছিলাম হাওড়া ব্রীজের পাশে একটি জায়গায় । সেখান থেকে গিয়ে একটি মুসলিম হোটেল খুঁজে বের করে রাতের খাবার পর্ব সমাপন করলাম । এরপর ট্রেনে নাস্তার জন্য কিছু হালকা পাউরুটি, বিস্কিট কিনলাম । ইন্ডিয়ার প্রতিটি রেলস্টেশনের সেবামূলক ব্যবস্থাগুলো খুবই প্রশংসনীয় । প্রচুর(ঠান্ডা+নরমাল) খাবার পানির ব্যবস্থা আছে প্রতিটি স্টেশনে । আরো আছে উন্মুক্ত হাইস্পিড ওয়াইফাই ব্যবস্থা । ইন্ডিয়াতে ১২ দিন অবস্থান করেছি আর রেলওয়ে ব্যবস্থা দেখে বরাবরই অবাক হয়েছি ।
যাহোক, হাতে সময় আছে দেখে চারজনে কিছু সময় নৌভ্রমণ করলাম হুগলি নদীতে । নদীর ঠাণ্ডা বাতাসে বেশ ভালো লাগলো । এরপর নৌভ্রমণ শেষে ফিরে এসে অনেক্ষণ বসে ছিলাম হাওড়া ব্রীজের পাশে একটি জায়গায় । সেখান থেকে গিয়ে একটি মুসলিম হোটেল খুঁজে বের করে রাতের খাবার পর্ব সমাপন করলাম । এরপর ট্রেনে নাস্তার জন্য কিছু হালকা পাউরুটি, বিস্কিট কিনলাম । ইন্ডিয়ার প্রতিটি রেলস্টেশনের সেবামূলক ব্যবস্থাগুলো খুবই প্রশংসনীয় । প্রচুর(ঠান্ডা+নরমাল) খাবার পানির ব্যবস্থা আছে প্রতিটি স্টেশনে । আরো আছে উন্মুক্ত হাইস্পিড ওয়াইফাই ব্যবস্থা । ইন্ডিয়াতে ১২ দিন অবস্থান করেছি আর রেলওয়ে ব্যবস্থা দেখে বরাবরই অবাক হয়েছি ।
যাহোক, আমি প্ল্যাটফর্মে গিয়েই ওয়াশরুমে ঢুকে হালকা হয়ে গোসল করে নিলাম । এখানে পায়খানার জন্য ৫ এবং গোসলের জন্য ৫ রুপী দিতে হলো । সেখান থেকে ইজি হয়ে বেড়িয়ে গিয়ে দেখলাম প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে আর বন্ধুরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে । অবশেষে বহুল আকাঙ্ক্ষিত সেই কালকা মেইলে চেপে বসলাম চারজনে ।
ইন্ডিয়ান ট্রেন
স্লিপার বগি ট্রেনের ভেতরে ৪ জন করে গুমানো যায়
ট্রেনে উঠেই একটা অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছিলো । তিন মিনিট লেটে ঠিক ১০.৪৩ এ ট্রেন প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে গেলো । ট্রেনে উঠেই শুরু হলো আড্ডা আর মাস্তি... শুরু হলো আমাদের ৩০ ঘণ্টার ট্রেন জার্নি ।
খরচঃ
রিক্সা ভাড়া = ২০/-
মেট্রোরেল ভাড়া ১০×২=২০/-
মিষ্টান্ন = ২৫/-
মার্বেল প্যালেসে প্রবেশ = ১৫/-
অভ্যন্তরীন বাস ভাড়া = ২০/-
দুপুরের খাবার = ৪৫/-
ট্রাম ভাড়া = ৫/-
কফি হাউজে কফি+ন্যুডলস= ৮৫/-
কলেজ স্ট্রীট-হাওড়া (বাস) = ৮/-
নৌভ্রমণ = ৫/-
রাতের খাবার = ৪৫/-
বিস্কিট+পাউরুটি = ২২/-
ওয়াশরুম = ১০/-
ওয়াশরুম = ১০/-
মোট = ৩২৫ রুপী
No comments:
Post a Comment